মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪, ০৪:১১ অপরাহ্ন

ব্যাঙ্গালোরে আটক কথিত বাংলাদেশীরা কোথায়?

ব্যাঙ্গালোরে আটক কথিত বাংলাদেশীরা কোথায়?

স্বদেশ ডেস্ক: ভারতের ব্যাঙ্গালোর থেকে বাংলাদেশী সন্দেহে নারী ও শিশুসহ যে ৫৯ ব্যক্তিকে আটক করে গত সপ্তাহে কলকাতা-সংলগ্ন হাওড়ায় নিয়ে আসা হয়েছিল, তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

ট্রেনে করে হাওড়া স্টেশনে নিয়ে আসার পরে ওই ৫৯ জনকে বালির নিশ্চিন্দা এলাকায় পুলিশের তত্ত্বাবধানে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আটক রাখা হয়েছিল।

কথিত ওই বাংলাদেশীদের হাওড়ায় নিয়ে আসার পর থেকে তাদের ওপরে নজর রাখছিলেন মানবাধিকার সংগঠন এ.পি. ডি.আর-এর সদস্যরা।

সংগঠনটির সম্পাদক ধীরাজ সেনগুপ্ত বলছিলেন, ‘শুক্রবার নিশ্চিন্দার ওই ভবনটিতে গিয়ে আমরা দেখি যে সেখানে তারা কেউ নেই। তাদের পুশব্যাকই করে দেয়া হয়েছে। এটা জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে আমাদের কাছে নিশ্চিত করেছে।’

ওদিকে বাংলাদেশের যশোরে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বিজিবির কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল সেলিম রেজা বিবিসিকে বলেছেন, ব্যাঙ্গালোর থেকে আনা ৫৯ জনের পুশব্যাক নিয়ে তাদের কাছে কোনও খবর না থাকলেও গত এক সপ্তাহে তার নিয়ন্ত্রণাধীন সীমান্ত এলাকা থেকে কমপক্ষে নয়জনকে কোনও বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য আটক করা হয়েছে।

তিনি জানান, গত একমাসে এরকম আটকের সংখ্যা হবে কমপক্ষে ৩০।

এছাড়া, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা এবং ঝিনাইদহ সীমান্তেও অবৈধভাবে প্রবেশের জন্য গত কয়েক সপ্তাহে বেশ ক’জনকে আটক করা হয়েছে বলে বিজিবির কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন।

ব্যাঙ্গালোরে আটককৃতদের বাংলাদেশে পুশব্যাক করার পরিকল্পনা নিয়েই তাদের ব্যাঙ্গালোর থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল কড়া পুলিশ প্রহরায়। তবে কোন কর্মকর্তা বা কোন সরকারি বিভাগই এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানাতে চাইছেন না।

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ‘একদিনে নয়, চার-পাঁচ দিন ধরে ছোট ছোট দলে ভাগ করে তাদের সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।’

কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, গোটা বিষয়টা নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক হৈচৈ হয়েছে। তাই গোপনীয়তার স্বার্থে নিশ্চিন্দার ওই ভবনটি থেকে তাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশের গাড়িও ব্যবহার করা হয় নি।

প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে বিষয়টির নজরদারি করা হয়েছিল বলেও জানা যাচ্ছে।

পেট্রাপোল সীমান্তের কাছাকাছি কোনও এলাকা দিয়েই তাদের পুশব্যাক করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন।

কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস বলছে, তাদের দেশের কথিত নাগরিকরা যে ব্যাঙ্গালোরে ধরা পড়েছিলেন, তাদের কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে, তাদের কোথায় রাখা হয়েছে, এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয় নি তাদের।

ওই ব্যক্তিরা যে বাংলাদেশেরই নাগরিক, তা নিশ্চিত করার জন্য কন্সুলার অ্যাক্সেস দেয়ার কথা, কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে যেহেতু কিছু জানানোই হয় নি, তাই উপ-দূতাবাসও কন্সুলার সেবার আবেদনও করতে পারে নি।

যে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ওই কথিত বাংলাদেশীদের রাখা হয়েছিল, সেই ভবনটির দায়িত্বে থাকা বালি-জগাছার ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক অসিতবরণ ঘোষ বিবিসিকে বলেন, ‘আমার কাছে শুধু কিছু মানুষকে রাখার জন্য একটি ভবনের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছিল। ওই সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি যেহেতু আমার দায়িত্বে, তাই আমি চাবি দিয়েছিলাম। ওখানে কাদের রাখা হয়েছিল, তারা সেখানে আছেন কী না, বা না থাকলে কোথায় গেলেন, এ ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করে লাভ নেই। প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করতে পারেন।’

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলছেন, ‘আমরা কিছু বলতে পারব না।’

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ অবশ্য এর আগে নানা সময়ে বিবিসিকে জানিয়েছে যে ‘পুশব্যাক শব্দটি তাদের অভিধানে নেই।’

তারা বলে থাকে, কোনও বাংলাদেশীকে বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশের জন্য আটক করা হলে হয় তারা স্থানীয় পুলিশের হাতে তুলে দেয়, অথবা ঐ বাংলাদেশীরা যদি পাচারের শিকার হয়েছেন বলে বিএসএফ-এর মনে হয়, তাহলে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিজিবি-র সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

কিন্তু ভারতের নানা রাজ্যে বাংলাদেশী সন্দেহে আটক ব্যক্তিদের যে মাঝে মধ্যেই পুশ-ব্যাক করে দেয়া হয় তা নিশ্চিত। উত্তর ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের বাংলাদেশী সন্দেহে আটক করে তাদের পুশব্যাক করে দেয়া হয়েছিল বলেও জানাচ্ছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

দু’হাজার নয় সালে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ অনুযায়ী, বাংলাদেশ-সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলো ছাড়া অন্য রাজ্যে বাংলাদেশী সন্দেহে কাউকে আটক করা হলে তাদের বিরুদ্ধে বিদেশি আইনের ১৪ নম্বর ধারায় ফৌজদারি অপরাধের মামলা না করে বিদেশি নাগরিক পঞ্জীকরণ দপ্তর বা এফ.আর.আর.ও-র সামনে হাজির করিয়ে পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে এসে বিএসএফ-এর হাতে তুলে দিতে বলা হয়েছে। তারাই বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করবে , এমনটাই লেখা আছে ওই এসওপি-তে।

মানবাধিকার সংগঠন মাসুমের প্রধান কিরীটী রায় বলছেন, “একদিকে যেমন ব্যাঙ্গালোরের পুলিশ ভাল কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা না করে, তেমনই আবার বেআইনি দিকটা হচ্ছে তারা যে বাংলাদেশীরই নাগরিক, সেটা নিশ্চিত কীভাবে করা হল? তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য কোনও আদালতে কেন তোলা হল না?’

‘যেখানে ভারতের আইন অনুযায়ী আটক করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে তোলার কথা, সেখানে একমাসেরও বেশি সময় তারা আটক রইলেন।’

কমনওয়েলথ হিউমান রাইটস ইনিশিয়েটিভ ভারতে আটক বাংলাদেশীদের নিয়ে কাজ করে থাকে। সংগঠনটির প্রোগ্রাম হেড মধুরিমা ধানুকা সম্প্রতি বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, ওই এসওপি নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। তারা এই এসওপি-র বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলাও করেছেন। সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877